ঘুরে দাঁড়াচ্ছে জাপার ভ্যানর্গাড “জাতীয় যুব সংহতি”
কাজী লুৎফুল কবীরঃ
শিগগিরই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে সংসদে বিরোধীদল জাতীয় পার্টির এক সময়কার ভ্যানগার্ড জাতীয় যুব সংহতি। এ লক্ষ্যে গঠন করা হয়েছে আহবায়ক কমিটি। বাতিল করা হয়েছে নির্বাচিত চলমান কমিটি। যদিও প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিলো ঐ কমিটির মেয়াদ।
আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সাবেক ছাত্রনেতা, রাজপথের কর্মীবান্ধব সৈনিক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি, বর্তমানে জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট প্রকাশনা ব্যবসায়ী আলমগীর শিকদার লোটনকে। তার সঙ্গে জুটি বেধে দেয়া হয়েছে আরেক তুখর সাবেক ছাত্রনেতা, নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, বর্তমানে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুল আহসান শাহজাদাকে।
এরশাদের জাতীয় পার্টি দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় অঙ্গ সংগঠনগুলো চলছিলো খুড়িয়ে খুড়িয়ে। প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিবেশ ও চাপের কারণে সঠিকমাত্রায় সাজানো সম্ভব হয়নি পল্লীবন্ধুর হাতে গড়া এই রাজনৈতিক দল এবং তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। বার বার নানা কটূচালে বাধাগ্রস্থ হয় বিকল্প শক্তি হিসেবে নতুন করে আত্মপ্রকাশ করার সব চেষ্টা। মামলা-মোকদ্দমায় জর্জরিত পার্টি ও চেয়ারম্যানের অস্থির সময়গুলোতে সুযোগ করে নেয় একশ্রেনীর ষড়যন্ত্রকারী। যারা সর্বদা এরশাদ বা জাতীয় পার্টির মঙ্গল না চাইলেও নিজেদের লাভ-লোকশানের হিসেবের খাতাকে করেছে রিষ্টপুষ্ট। গেলো ২৪ বছরে কেউ কেউ হয়েছেন এমপি-মন্ত্রী। হাতিয়ে নিয়েছেন দলের পদ-পদবী ও সরকারী সুযোগ সুবিধা। হয়েছেন সম্পদের মালিক।
১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের পর সেনাপ্রধান লেঃ জেনারেল এইচ এম এরশাদ পূর্বজের পদাঙ্ক অনুসরন করে স্বল্প সময়ের মধ্যেঅরাজকতামুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে সাধারণ নির্বাচনের ঘোষনা দিলেও সেই অবস্থানে থাকতে পারেনি বেশী দিন। নির্বাচনের সেই পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় রাজনৈতিক লাভ-লোকশানের হিসেব-নিকেষ। ভেস্তে যায় সকল চেষ্টা। আসে নতুন পরামর্শ। গঠন করা হয় রাজনৈতিক দল। যুব শক্তিকে কাজে লাগাতে দাঁড় করানো হয় নতুনবাঙলা যুব সংহতি। ১৯৮৩ সালের ২রা এপ্রিল এটিএম রফিকুল ইসলামকে (বর্তমানে বিএনপি নেতা) আহবায়ক এবং মিয়া শহীদকে এক নম্বর যুগ্ম আহবায়ক করে গঠন করা হয় নতুনবাঙলা যুব সংহতির প্রথম কমিটি। পরে সম্মেলনের মাধ্যমে মিয়া শহীদ সভাপতি ও এমএইচ খান মঞ্জু (যিনি পরবর্তীতে বিএনপিতে চলে যান) সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এর ছয় মাস পর আরো গতিশীল করতে আরেকটি সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতির দায়িত্বে আসেন (সাবেক শিক্ষামন্ত্রী,বর্তমানে মঞ্জু জেপির মহাসচিব) শেখ শহীদুল ইসলাম। সাধারণ সম্পাদক হন এমএইচ খান মঞ্জু। এর পরের ধাপে আবারো সভাপতির দায়িত্বে আসেন শেখ শহীদ, আর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সাইফুর রহমান।
প্রতিষ্ঠার অল্পদিনেই যুব সংহতি সাংগঠনিকভাবে হয়ে ওঠে শক্তিশালী। যোগদেন সমাজের বিভিন্নস্তরের তরুণ-তরুনীরা। ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, খেলোয়াড়, ক্রীড়া সংগঠক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাসহ নানাস্তরের মানুষের পদভারে যুব সংহতি পরিনত হয় দেশ গঠনের বড় হাতিয়ারে। এমনকি দিশেহারা বেকার যুবকরা পান নতুন উদ্দীপনা। এর মধ্যদিয়ে খুঁজে পান জনসেবা ও কর্মসংস্থান। জেগে ওঠে নতুনবাঙলা। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে যুব সংহতির কর্মকাণ্ড। সারাদেশে গঠিত হয় কমিটি। যা ছিলো না গতানুগতিক রাজনৈতিক শক্তি প্রর্দশনের প্লাটফর্ম। তারপরও ভালো উদ্যোগে সাড়া পড়ায় যুব সংহতি দিনে দিনে চলে আসে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে। যুব সংহিতর শক্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনায় সাফল্যের পথে এগিয়ে যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তবে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থা ১৯৯০ সালে, বিশেষ করে আল্লাহওয়ালা ভবন খ্যাত যুব সংহতির সভাপতি ছিলেন সাইফুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক হন সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। যে কমিটি সাইফুর-বাবলা, বাঘ বলে পরিচিত।
১৯৮৬ সালে দল গঠন ও এরশাদ নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেয়ার আগেই পার্টির সঙ্গে মিল রেখে নতুনবাঙলা যুব সংহতির নাম করা হয় জাতীয় যুব সংহতি।
গণ-আন্দোলনের মুখে তিন জোটের রূপরেখাকে সামনে রেখে ৯০ এর ৬ই ডিসেম্বর জাতীয় পার্টি রাষ্ট্র ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার পর জনরোষে পুড়ে ছাই হয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় কার্যালয় আল্লাহওয়ালা ভবন। মামলা-মোকদ্দমা,জেল-জুলুমের ভয়ে পালিয়ে বেড়ান তুখোড় সব যুবনেতারা। এভাবেই গেলো ২৪ বছর রাজনৈতিক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলোর হিংসাত্বমূলক আচরণ এবং দড়ি টানাটানি আর ষড়যন্ত্রকারীদের লাভ-লোকশানের ভাগবাটোয়ারা দিতে দিতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে জাতীয় যুব সংহতি। শক্তির বিচারে গর্জে ওঠা বাঘ হয়ে গেছে মেছো বাঘ। সাংগঠনিক শক্তিকে ঘুরে দাঁড় করাতে বার বার দেয়া হয়েছে নতুন কমিটি। কিন্তু যোগ্য ও কর্মীবান্ধব নেতাদের স্থান করে না দেয়ায়, বাধাগ্রস্থ হয়েছে সাংগঠনিক তৎপরতা। সুযোগে পদ-পদবী হাতিয়ে নিয়েছে সুবিধাবাদী সুযোগ সন্ধানীরা। ক্ষমতার বাইরে থাকা জাতীয় পার্টির দীর্ঘদিনের নির্বাহী পরিচালক শক্তিশালী যুব সংহতি গঠনে বেশ কবার চেষ্টা করেও সফল হননি নানা প্রতিকুল কারণে। তবে এবার ফের দল পরিচালনার দায়িত্ব কাউন্সিলের মাধ্যমে পেয়ে শক্ত হাতে প্রতিটি পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। তারই একান্ত চেষ্টায় এরশাদ পুরানো কমিটি ভেঙ্গে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নতুন আহবায়ক কমিটি দিয়েছেন গত ২৯শে আগষ্ট । বিশেষ করে সিনিয়র কো চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ এবং কো চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সমন্বয়ে বর্তমান মহাসচিব দলকে শক্তিশালী করতে নিবেদিত সৈনিকদের খুঁজে খুঁজে দিচ্ছেন বিভিন্ন দায়িত্ব। বলা হয়েছে মাঠের কর্মীদের সুযোগ করে দেয়া হবে এবার। তেমনটা দেখা গেছে জাপার কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন প্রক্রিয়াতেও। কিছু পদ-পদবী নিয়ে সমালোচনা থাকলেও এ বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এরই মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে পুরোদমে কাজ শুরু করেছেন নতুন দায়িত্ব প্রাপ্ত দুই সাবেক ছাত্রনেতা। প্রতিদিন বসছেন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। কথা বলছেন বিভিন্ন জেলা-উপজেলা-ওয়ার্ড এবং ইউনিয়ন কমিটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে। থাকছেন পুরানো কমিটির নেতারাও। সকাল-দুপুর, বিকেল-সন্ধ্যা, রাত গভীর নিরলসভাবে কাজ করছেন সাবেক রাষ্ট্রপতির কাঙ্থিত যুব সংহিত গড়তে। সবার সঙ্গে সমন্বয় করে যোগ্যদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সম্মেলনের প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন লোটন-শাহজাদা জুটি।
২৯শে আগষ্ট দায়িত্ব পাওয়ার পর আলমগীর-ফখরুল ৩০শে আগষ্ট থেকে ২রা সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রায় ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা কমিটিকে প্রয়োজনীয় চিঠিপত্র দিয়েছেন। টেলিফোনে যোগাযোগ করছেন প্রতিদিন। আহবায়ক কমিটির পূর্ণাঙ্গ আকার দাঁড় করানোর পর,অক্টোবর মাসকে সাংগঠনিক মাস আখ্যায়িত করে মেয়াদ উর্ত্তীন জেলা কমিটিগুলোকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্মেলন শেষ করার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে এরইমধ্যে। এরইমধ্যে মেয়াদ উর্ত্তীন দুটি জেলা সম্মেলনের তারিখও চুড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর ঐ দুটি জেলা যুব সংহতির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। পার্টির চেয়ারম্যান ঐ সম্মেলনে যোগ দেয়ার ব্যাপারে প্রাথমিক সম্মতিও জানিয়েছেন।
সাংগঠনিক তৎপরতা নিয়ে প্রতিক্ষণের সঙ্গে কথা বলেন, নবগঠিত আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব ফখরুল আহসান শাহজাদা। জানান, যুব সংহতিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শক্তিশালী করতে নেয়া হয়েছে বেশকিছু উদ্যোগ। সাংগঠনিক জেলা কমিটিগুলোকে এই প্রথম কেন্দ্র থেকে সরাসরি দেয়া হচ্ছে নির্দেশনা। এর প্রভাবও পড়েছে তৃণমূল রাজনীতিতে। শুরু হয়েছে শক্তি অর্জনের প্রতিযোগীতা। জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন, নগর ও ওয়ার্ড নেতারা নতুন-পুরাতন যোগ্য অবহেলিত কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। কাছে টানছেন হতাশ ও রাজনীতি থেকে সরে যাওয়া নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের। কেন্দ্র থেকে সরাসরি যোগাযোগ করায় জেলা কমিটির নেতাকর্মীরা বেশ উৎসাহিত বলে জানিয়েছেন নতুন এই সদস্য সচিব। শাহজাদা জানান,এরইমধ্যে বেশকটি প্রবাসী কমিটির নেতারা যোগাযোগ করেছেন। বিশেষ করে মালয়েশিয়া ও লন্ডন শাখা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া সৌদি আরব, ইতালী ও কুয়েত থেকে সাড়া পাওয়া গেছে।
আগের কেন্দ্রীয় কমিটির কিছু ব্যর্থতার অভিযোগ এনে ফখরুল আহসান শাহজাদা বলেন,তারা সম্মেলনের মাধ্যমে মাত্র ১৫টি জেলা কমিটি গঠন করতে সক্ষম হয়েছিলো। অথচ এরইমধ্যে মেয়াদ উর্ত্তীন ৩২টি জেলা কমিটি ১৫ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্মেলনের চুড়ান্ত তারিখ নির্ধারণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে জানান তিনি। আর যেসব কমিটিগুলো মেয়াদ উর্ত্তীন হয়নি, তারা অক্টোবরের মধ্যে সকল ইউনিট কমিটি নিয়ে বর্ধিতসভা করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
এছাড়া আগামী ৮ই সেপ্টেম্বর জাতীয় যুব সংহতির পূর্ণাঙ্গ ওয়েব সাইট চালু করার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে। যা উদ্বোধন করবেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
আহবায়কের দায়িত্ব নেয়ার পর এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন এক সময়কার লোটন-ঝোটন খ্যাত জাতীয় যুব সংহতির নতুন আহবায়ক, জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান আলমগীর শিকদার লোটন। অভিযোগ তোলেন পূর্বের কমিটির কর্মকাণ্ড নিয়ে। তিনি জানান,সংগঠন ছিলো অফিস কেন্দ্রিক। কুক্ষিগত করে রাখা হয়েছিলো মাত্র কয়েকজনের হাতে। যুব সংহতি পরিনত হয় তলাবিহীন ঝুড়ি্তে। তৃণমূল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে কেন্দ্রীয় কমিটি। এ অবস্থায় কাঠখড় পুড়িয়ে হলেও পল্লীবন্ধুর আর্দশকে সামনে রেখে সংগঠনকে শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দেন সাবেক এই ছাত্রনেতা। তিন মাসের মধ্যে সম্মেলন করে গতিশীল নের্তৃত্বের মাধ্যমে যুব সংহতিকে এগিয়ে নেয়ার হবে বলেও জানান তিনি। আগামী দিনে জাতীয় রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির সহযোগী হিসেবে ভূমিকা রাখার আশ্বাসও দেন এরশাদের ভ্যানগার্ড খ্যাত যুব সংহতির বর্তমান আহবায়ক আলমগীর শিকদার লোটন। নিজেদের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও সাইফুর-বাবলার পুরানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন এই জাপা নেতা। তিনি বলেন, জনে জনে যোগাযোগ, উৎসাহ-উদ্দীপনা যোগাতে নিয়মিত কর্মসূচী এবং সম্মিলিত শ্রম দিয়ে দীর্ঘদিনের ঘাটতি পুরনের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
এদিকে নতুন আহবায়ক কমিটি নিয়ে আশার কথা জানিয়েছেন লন্ডন যুব সংহতির আহবায়ক কবীর আলী। তিনি বলেন, যারা দীর্ঘদিন দলের জন্য নিবেদিত, তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন এবং নগর ও ওয়ার্ড কমিটিগুলোর কর্মকাণ্ড মনিটরিং এর জন্য পৃথক সেল গঠনের পরামর্শ তাঁর। নতুন আহবায়ক ও সদস্য সচিবকে অভিনন্দন জানিয়ে কবীর আলী আশাবাদ ব্যক্ত করেন, তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতায় যুব সংহতি আগের চেয়ে অনেক বেশী শক্তিশালী হবে। লোটন-শাহজাদাকে পরীক্ষিত সৈনিক উল্লেখ করে খুলনা জেলা যুব সংহতির সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, চুড়ান্ত সম্মেলনের জন্য তিন মাস পর্যাপ্ত সময় নয়। কারণ ৭২টি সাংগঠনিক জেলাতেই নতুন করে সম্মেলন করতে হবে। মেয়াদ উর্ত্তীন হয়নি এমন জেলাগুলোকেও পর্যবেক্ষণে আনতে হবে। আর এ জন্য অনেক বেশী সময় লাগবে। তবে বিভাগওয়ারী টিম গঠন করে দেশব্যাপী সম্মেলনের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা গেলে স্বল্প সময়ে তা হয়তো সম্ভব। কিন্তু মনে রাখতে হবে ষড়যন্ত্রকারীরা বসে নেই। তারা আবারো পেছন থেকে ঠেনে ধরার ষড়যন্ত্রে নেমে পড়েছে। তিনি বলেন, নতুনদের পাশে থেকে রাজনীতি করতে চায়,অনেকে। তাই এরইমধ্যে সারাদেশে বেশ সারা পড়েছে। রাজনীতিতে হতাশরাও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বলে জানান খুলনা জেলা যুব সংহতির সভাপতি। চট্টগ্রাম মহানগর যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর ভূইয়া সুজন বলেন, যেসব জেলা কমিটি হয়নি, সেগুলো আগে সমাপ্ত করতে পারলেই স্বল্প সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় সম্মেলন সম্ভব। তবে আহবায়ক ও সদস্য সচিবের মধ্যে সঠিক সমন্বয় হলে সাফল্য আসবে বলে মনে করেন চট্টগ্রামের এই যুবনেতা। আগের কেন্দ্রীয় কমিটির অসহযোগীতার অভিযোগ এনে নোয়াখালী জেলা যুব সংহতির আহবায়ক আমির হোসেন রহিম বলেন, নতুন নের্তৃত্বে জাতীয় যুব সংহতি সারাদেশে আবার জেগে ওঠবে পূর্বের ন্যায়।
ছাত্র রাজনীতি থেকে আসা নের্তৃত্বের কাছে ভালো কিছু পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে সিলেট জেলা যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক মুর্তজা আহমেদ চৌধুরী বলেন, লোটন-শাহজাদার মধ্যে রাজনৈতিক সমন্বয় গভীর। তারা যেভাবে কাজ শুরু করেছেন, আমার বিশ্বাস তৃণমূল থেকে জাতীয় যুব সংহতিকে ঢেলে সাজানো সম্ভব।
ছাত্র রাজনীতির পরীক্ষিত কর্মীবান্ধব নেতা লোটন-শাহজাদা:
কাজী শামসুল ইসলাম রঞ্জনঃ জাতীয় যুব সংহতির নতুন আহবায়ক,জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান আলমগীর শিকদার লোটন ও সদস্য সচিব,দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুল আহসান শাহজাদার রয়েছে দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। তারা দু’জনই নতুনবাঙলা ছাত্র সমাজের রাজনীতি থেকে ওঠে আসা মাঠের পরীক্ষিত সৈনিক। শুধু তাই নয়,মেধা-দক্ষতা ও যোগ্যতায় লোটন-শাহজাদা জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা করে নিয়েছেন বেশ ক’বছর আগে। পাশাপাশি রয়েছে সামাজিক সেবায় অনন্য অবদান। পালন করছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বেশকিছু সামাজিক সংগঠনের দায়িত্বও। এবার জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে দু’জনই পদন্নোতি পেয়েছন যোগ্যতার সাথে। সবশেষ দলের চেয়ারম্যান,সাবেক রাষ্ট্রপিত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ লোটনকে আহবায়ক ও শাহজাদাকে সদস্য সচিব করে তাদের কাঁধে তুলে দিয়েছেন ভ্যানগার্ড খ্যাত জাতীয় যুব সংহতির দায়িত্ব।
আলমগীর শিকদার লোটন
ভাইস চেয়ারম্যান,জাতীয় পার্টি
আহবায়ক,জাতীয় যুব সংহতি
১৯৮৪ সালে ঢাকা মহানগর নতুনবাঙলা ছাত্র সমাজে যোগদানের মধ্যদিয়ে রাজনীতি শুরু করেন আলমগীর শিকদার লোটন। প্রথমধাপে সরাসরি হন মহানগর কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ৮৬তে পদন্নোতি পেয়ে জাতীয় ছাত্র সমাজের ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পাশাপাশি ঢাকা বিভাগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ভিপি নির্বাচিত হন তিনি। ৮৭ সালে ছাত্র রাজনীতি বিলুপ্তির পর ১৯৮৯ সালে জাতীয় যুব কল্যাণ কেন্দ্রের ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি নির্বাচিত হন এই ছাত্রনেতা। এরশাদের ক্ষমতা হস্তান্তরের পর ১৯৯০ সালে গঠিত সংগ্রামী ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহবায়কের দায়িত্বে আসনে লোটন। ৯২তে অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয় তাঁকে। আর ৯৩ সালে সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং ১৯৯৪ সালে নতুন করে গঠন করা জাতীয় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন আলমগীর শিকদার লোটন। এরপর ধারাবাহিকভাবে পদন্নোতি পেয়ে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক,যুগ্ম সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক,যুগ্ম যুব বিষয়ক সম্পাদক এবং যুব বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০৭ সালে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পান সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা,বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ডা শাহদাত আলী শিকদারের তৃতীয় পূত্র। সবশেষ ২০১৪সালে জাতীয় যুব সংহতির আহবায়ক করা হয় তাঁকে। এরপর ২০১৬তে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে তিনি দলের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে গেলো ২৯শে আগষ্ট আবারো তাঁকে জাতীয় যুব সংহতির আহবায়কের দায়িত্ব দেন এরশাদ। এছাড়া ২০১১ থেকে ২০১৬ পযর্ন্ত দু দফায় বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির নির্বাচিত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন সাফল্যের সাথে। এফবিসিসিআই ও বাংলা একাডেমীর সদস্যসহ বেশকিছু সামাজিক সংগঠন ও মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত কয়েকটি কমিটির সদস্য হিসেবেও কাজ করছেন এই রাজনীতিবিদ। একুশে বই মেলা কমিটির স্থায়ী সদস্যও তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে এক পূত্র ও কন্যা সন্তানের জনক আলমগীর শিকদার লোটনের স্ত্রী পূনাম প্রিয়াম একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
সাংগঠনিক সম্পাদক,জাতীয় পার্টি
সদস্য সচিব,জাতীয় যুব সংহতি
জগন্নথ বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিএসসি(অর্নাস), এমএসসি ডিগ্রী অর্জনকারী ফখরুল আহসান শাহজাদা ১৯৮৬ সালে নতুনবাঙলা ছাত্র সমাজে যোগ দিয়ে শুরু করেন রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। বরিশালের মূলাদী উপজেলার ছফিপুর ইউনিয়নের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের বড়. সন্তান শাহজাদা প্রথমে ঢাকা মহানগর নতুনবাঙলা ছাত্র সমাজের সদস্য হিসেবে সক্রিয় রাজনীতিতে আসেন। পরবর্তীতে নতুনবাঙলা ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য,তথ্য সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক, সহ-সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯৯ থেকে ২০০১ সাল পযর্ন্ত জাতীয় ছাত্র সমাজের আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেন রাজপথের তুখোর এই ছাত্রনেতা। দক্ষতার সঙ্গে ছাত্র রাজনীতি শেষে আসেন যুব রাজনীতিতে। বেশ ক’বছর জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন শাহজাদা। পরে নিজ জন্মস্থান ছফিপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন সফলতার সাথে। সেই সঙ্গে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় রাজনীতিতেও যোগ্যতার সাথে স্থান করেন নেন সাবেক এই ছাত্রনেতা। ২০০৭ সালে জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। পরবর্তীতে দলের যুগ্ম শিল্প বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পযর্ন্ত মূলাদী উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ফখরুল আহসান শাহজাদা। এছাড়া সামাজিক সেবায়ও রয়েছে তার সক্রিয়া অংশগ্রহণ। বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও সদস্য হিসেব দায়িত্ব পালন করছেন এই জাপা নেতা। ব্যক্তিগত জীবনে দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক শাহজাদার স্ত্রী আমেনা খানম পেশাগত জীবনে একজন শিক্ষক।
======